ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫ , ১৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমুদ্রে জ্বালানি অনুসন্ধানের সময় এসেছে

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ৩০-০১-২০২৫ ১১:৩৪:০৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ৩০-০১-২০২৫ ১১:৩৪:০৯ পূর্বাহ্ন
সমুদ্রে জ্বালানি অনুসন্ধানের সময় এসেছে সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
চাহিদা ও জোগানে বড় পার্থক্য থাকায় শীত মৌসুমে যখন জ্বালানির চাহিদা কম, তখনই শিল্প ও বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। ব্যবসায়ী ও নাগরিকদের ভেতর এ নিয়ে অস্বস্তি–অসন্তোষ বাড়ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন যেমন কমেছে, আবার ডলার-সংকটের কারণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস  আমদানিও বাড়ানো যায়নি। এ অবস্থায় সামনের গ্রীষ্ম মৌসুমে সার্বিক জ্বালানি পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, সেটা একটা বড় শঙ্কার বিষয়।

দেশীয় উৎস থেকে জ্বালানি অনুসন্ধানে জোর না দিয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে আমদানির ওপর নির্ভরশীল করে তোলে। ফলে দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা যেখানে ৩৮০ কোটি ঘনফুট, সেখানে সরবরাহ ২০০ কোটি ঘনফুটের নিচে নেমে এসেছে। গ্যাসের সংকট মোকাবিলায় একটা বিকল্প হিসেবে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ এলএনজি আমদানির চিন্তা করছে সরকার। কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতির অনিশ্চয়তা এবং আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যে পরিস্থিতি, তাতে এ চিন্তা কতটা বাস্তবে রূপ নেবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

গ্যাসের এই সরবরাহ–সংকট মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ নতুন করে ৩১টি কূপ সংস্কারে যে অগ্রাধিকার ঠিক করেছে, সে সিদ্ধান্তকে আমরা ইতিবাচক মনে করি। কেননা, দেশের জ্বালানিবিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই দেশের পুরোনো কূপগুলোর সংস্কার, উন্নয়ন এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। পুরোনো কূপ সংস্কারে যে উৎপাদন বাড়ানো যায়, তার প্রমাণ মিলছে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের ভাষ্য থেকে। সম্প্রতি সাতটি কূপ সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ায় জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে।

এটা ঠিক, জ্বালানি খাতের বর্তমান যে সংকট, তার দায় বিগত সরকারের। গোষ্ঠীর স্বার্থে তারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে অনেকাংশে আমদানি ও বিদেশনির্ভর করে তুলেছিল। প্রাথমিক জ্বালানির উৎস নিশ্চিত না করেই তারা একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছিল। দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অন্যতম খাত হয়ে উঠেছিল এটি। দায়মুক্তি আইন করে তার বৈধতাও তারা দিয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের ঘাড়ে জ্বালানি খাতে বিশাল দায়দেনার বোঝাও এসে চেপেছে।

এ রকম বাস্তবতায় দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে পুরোনো গ্যাসকূপগুলো সংস্কারের পাশাপাশি নতুন কূপ আবিষ্কারই একমাত্র পথ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর দিয়ে কূপ খননের কাজে হাত দিয়েছে। আগামী বছর থেকে দেশে আরও ১০০টি কূপ খননের পরিকল্পনা তারা হাতে নিয়েছে। এখানে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের সক্ষমতাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। কেননা, গ্যাস অনুসন্ধানে বাপেক্সের সফলতার হার বিদেশি কোম্পানির চেয়ে বেশি।

দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তার কথা চিন্তা করলে এ মুহূর্তেই সরকারকে সমুদ্র অঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মনোযোগ দিতে হবে। গভীর সমুদ্রে ১৫টি এবং অগভীর সমুদ্রে ১১টি মিলে মোট ২৬টি ব্লক আছে বঙ্গোপসাগরে। ২০১২ সালে ভারতের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির পর এক দশক পেরিয়ে গেলেও বিশাল সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজটি অধরাই থেকে গেছে। বর্তমান সরকার গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহ্বান করেছিল। সাতটি বহুজাতিক কোম্পানি দরপত্রের নথি কিনলেও শেষ পর্যন্ত তারা দরপত্র জমা দেয়নি। বিদেশি কোম্পানিগুলো কেন দরপত্র জমা দিল না, সেটা অনুসন্ধান করে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা জরুরি। মন্থরতা কাটিয়ে অর্থনীতিকে বেগবান করতে হলে আমদানিনির্ভরতা থেকে মুক্ত হয়ে এমন একটি গতিশীল জ্বালানি নীতি দরকার, যেখানে দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা ও স্বার্থ অগ্রাধিকার পাবে।

বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন

সূত্র : প্রথম আলো


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ